কোন এক কালীদাসী- মার কথা !
চন্দন সরকার
জাতীয় নির্বাচন সাধারণত ৫ বছর পর পর আসে আর যায় পালা করে আর পালা করে আসে হিন্দু নিধন এবং তাদের উপর অত্যাচারের পালা । স্বাধীনতার পর থাকে কম আর বেশী এটা অলিখিত নিয়ম, প্রতিদিন যানবাহন দুর্ঘটনায় মতো কিছু মানুষ মারা যাওয়া যেমন রুটিন, ঠিক তেমনি জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং পরে কিছু হিন্দুরা মারা যাবে, অত্যাচারিত হবে এটা এখন অলিখিত বিধান। এটা আমারাও অনেকটা যানবাহন দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাওয়ার মতো মনে করে মেনে নিয়েছি, এটা নতুন কিছু মনে হয় না, ম্নে করার মতো কিছু হ্য়তোবা নেইও কিন্তু এখন এক নতুন মাএা যুক্ত হলো, স্থানীয় নির্বাচন। ৭-৮% হিন্দুদের মধ্যে পুরুষদের তো আর চেনা যায় না কিন্তু শাখা সিদুঁর পড়া হিন্দু মহিলাদের এবং তাদের ছবি ছাপার একটা হিড়িক পরে যায় ইলেকশনের সময় (প্রথম সারির দৈনিক আছে যারা ইলেকশনে হিন্দু মাহিলা ছাড়া অন্য ছবি ছাপে না) আর তার পরের দিনের ছবিটা ভিন্ন যা আবার পএিকাওয়ালা ছাপেন না, এটা তাদের উদারতা! হিন্দু মাহিলা নির্জাতন, ধর্ষণ, খুন –অলিখিত বিধান। ইলেকশনে যদি হেরে যায় খুব খারাপ – হিন্দুরা ভোট দেয়নি পরিণাম আমি হেরেছি কাজেই, অত্যচার। জিতে গেলেই খারাপ, হিন্দুর ভোট আর কয়টা জিতিয়েছে তো অন্যরা । কাজেই কিছু হিন্দুদের মারলে মারুক – সে তো আর বাকীদের মন খারাপের কারন হতে পারে না । বলির পাঁঠা ঐ হিন্দু ।
খুলনার, ডুমুরিয়া ২২ তারিখের নির্বাচন, আওয়ামী রিরোধী প্রার্থী জয়ী, সমস্যাটা হলো, হিন্দুরা কেন নৌকায় ভোট দিলো? জয়লাভের সাথে সাথেই হিন্দু অত্যাচার। আমরা ডুমুরিয়া ৩১শে মার্চ গিয়েছিলায, বিভিন্ন লোকের সাথে কথা বলার পর, কালীদাসীর বাড়ি, পুরুষ শুন্য। কালীদাসী ৫০+ বয়স, রাস্তার পাশেই তার বাড়ি, দুপুরের কড়া রৌদ- ভিতরে কেউ আছেন? কোন সাড়া নেই- কিছুক্ষন বাদে, কি চাও বাবা? বাড়িতে কেউ থাকে না । আমরা কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি? শুনেছি ইলেকশনের পর আপনাদের উপর অত্যাচার হয়েছে? বাইরে এসে ভুত দেখার মতো আমাকে এবং আমার হাতের ডায়রি দেখে বলেলেন – বাবা তুমি কি লিখবা? লিখে কি হবে? তুমি কিছু লিখবে এবং এখান থেকে যাবার পর সমস্যা বাড়বে । আমি রৌদের মধেই তার উঠানে বসলাম কিছুক্ষন, জল খাবে বাবা, কালীদাসী আমার মনের কথাটা সে পড়ে নিয়েছিলো – আমাদের জলটাও অনেক দাম দিয়ে কিনতে হয়, এক জার জলের দাম ৬০ টাকা, ঢাকায় আমরা যা ৪০ টাকা দিয়ে কিনি। এক গ্লাস জল খাওয়ার পর নিজে থেকে বললেন- বাবাজি, স্বাধীনতার সময় অনেকে ভারতে চলে গেলেন, আমার উনি( স্বামী) বললেন দেশকে স্বাধীন করি, ইন্ড্রিয়ার থেকেও আমরা ভালো থাকবো- বাব-দাদার ভিটা আমাদের, আমরা যাব না কোথাও। স্বাধীনতার সময় উনার একটা সমস্যা হয়েছিল- মানুষদের সাহায্য করতে গিয়ে, স্বাধীন হবার কয়েক বছরে পর বিনা চিকিৎসায় তিনি চলে গেলেন।
একটা ছেলে একটা মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্ট করেছি, এই বাড়িটা বানিয়েছি, আজ এই স্বাধীন দেশে আমার ছেলে এবং মেয়ে এই বাড়িতে ঘুমাতে পারে না, ভয়ে। কখন তাদের উপর অত্যাচার হয়,বাবা তুমি আমার কথা লিখবে, কি লিখবে বলো? – আমি তাকে বলেছিলাম, আপনি কাউকে জানাননি কেন? অনেক হিন্দু নেতাও তো আছেন? সে একটা বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বললেন – বাংলাদেশে হিন্দুদের জায়গা দখল করাতো খুব সোজা, প্রথমে একটা হুমকি দিতে হবে প্রাণের, তাতেও যদি কাজ না হয়, তাহলে দিতে হবে মেয়ে এবং বউকে তুলে নেওয়ার হুমকি,আর এই হুমকির পর হিন্দুতো দুরের কথ্ আছে কোন তোমার হিন্দু নেতা? এখানে দ্বাঁড়িয়ে থাকবে? তার কথার কোন উত্তর আমার জানা নেই, কিছুক্ষন চুপ থাকার পর বললাম, ভালো থাকবেন – কালিদাসী মুখে কোন কথা বলেনি – শুধু হাত দিয়ে দেখালেন ঢাকার রাস্তাটা ঐ দিকে………
লেখকঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী ও প্রাবন্ধিক ।