সাম্প্রদায়িক বিষফোঁড়া “হেফাজত”

এখন সবার মুখে মুখে । হেফাজতের বক্তব্য গুলি বিতর্কিত এবং অসাংবিধানিক হলেও এই ব্যাপারে সরকারের নিরবতা বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে, যা সরকারের জন্যে মোটেও সুফল বয়ে আনবে না । দেশ বিদেশে বসবাসকারী বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ মনে করেন, হেফাজত দেশ থেকে হিন্দুদের উচ্ছেদ করার হুমকি দিয়ে মারাত্মক অপরাধ করছেন যা আইনত দন্ডনীয় । এখন সরকারের উচিত হইবে হুমকি দাতাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচারের সম্মুখীন করে শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত করা ।

বাংলাদেশের হিন্দুরা প্রাচীন কাল থেকেই বংশ পরাম্পরায় এই দেশের নাগরিক, তারা কেউ মরুভূমি থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে নাই । দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধেও এই দেশের হিন্দুরা প্রাণ দিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন হিন্দু নারীরাও সম্ভ্রম হারিয়েছেন । স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও হিন্দুরা নিজ ভূমিতে আক্রান্ত হচ্ছেন, লাঞ্চিত হচ্ছেন, নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন, জোরপূর্বক ধর্মান্তরীত করা হচ্ছে । অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে এত নির্যাতন সহ্য করেও হিন্দুরা যখন দেশ ত্যাগ করতে চাচ্ছেনা ঠিক তখনই তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই হেফাজতে ইসলাম নামক একটি ধর্মীয় উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠনের নেতারা প্রকাশ্যে হিন্দুদের দেশ হইতে উচ্ছেদর হুমকি দেয় !! হেফাজতের হুমকিটি কোন সাধারণ হুমকি নয় ! তাদের হুমকিটিকে একটি জাতির বিরুদ্ধে হুমকি, একটি অস্তিত্বের বিরুদ্ধে হুমকি, একটি বিশ্বাসের বিরুদ্ধে হুমকি এবং সর্বোপরি একটি দেশের মেরুদন্ডকে ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকির সামিল হিসাবে গণ্য করতে হইবে । তাছাড়া কিসের ভিত্ততে, কোন ক্ষমতা বলে একটি জাতিকে দেশ থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি দেওয়া হয়েছে কিংবা তাদের সাথে একাত্তরে পরাজিত কোন অশুভ শক্তির হাত রয়েছে কিনা উপযুক্ত তদন্ত সাপেক্ষে হেফাজতের আসল মুখোশ সরকারকেই উন্মোচন করতে হবে । তা না হলে সরকারের ভাবমুর্তি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে ক্রমশঃ ঘোলাটে হইতে থাকিবে । হেফাজতের নেতারা শুধু হিন্দুদের উচ্ছেদের কথাই বলেনি তারা প্রতিবেশী দেশের সাথে যুদ্ধ করার অভিপ্রায়ও ব্যক্ত করেছে যা নিতান্তই আকাশ কুসুম কল্পনার সাদৃশ্য । যদিও অসম্ভব কিন্ত তাদের এহেন গর্হিত বক্তব্যটি অবশ্যই ঐতিহাসিক ভাবে নথিভুক্ত হয়ে থাকবে, যা বন্ধু প্রতিম দেশ ভারতের কাছে আমাদের সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি করতে পারে ।

অতঃএব এখনই “সাম্প্রদায়িক বিষফোঁড়া” হেফাজতের লাগাম টেন ধরুন নয়ত ভবিষ্যতে তারা আরও বড় ধরনের ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারে । সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষার্থে হেফাজকে না বলার এখনই উপযুক্ত সময় ।

Share

Compare