বাংলাদেশের হিন্দুদের  উন্নয়নঃ বঞ্চনা ও রাজনৈতিক অর্থনীতি

চন্দন সরকার

অর্থনীতি উন্নয়ন বলতে প্রায়শ আমরা বুঝে থাকি মোট দেশজ সম্পত্তির উৎপাদনের বৃদ্ধি অথাৎ GDP অথবা মাথাপিছু মানুষের আয়ের বৃদ্ধি। এই ধারণাটি অনেকাংশেই ভুল, কারণ মাথাপিছুর গড় হিসেবে যে উন্নয়ন সরকার দেখায় তা যাদের মাথার সংখ্যা দেশী তাদের বাদ দিয়েও মাথা পিছু আয় বাড়ানো সম্ভব।

দেশের সংবিধানের অনুযায়ী জনগণই প্রজা্তন্ত্রের মালিক এবং রাস্ট্র অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান শিক্ষার পাশাপাশি সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করবে এবং মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনীতিক অসাম্য বিলোপ করবে । কেবল ধর্ম গোষ্টি, বর্ণ নারী বা পুরুষভেদে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র পক্ষপাতিত্য করবে না।

এখন প্রশ্ন হলো সংখ্যালঘু জনগোষ্টি কি জনগণ? তাদের প্রতি রাষ্ট্রের কোন বৈষম্য আচরন থাকবে না – এটা কতটুকু প্রযোয্য? যেখানে একজনকে ধর্ম অবমাননার দোহাই দিয়ে কান ধরে উঠবস করা হয়, অথচ অন্য জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।ধর্ম অবমাননার দোহাই দিয়ে গ্রামের গ্রাম জালিয়ে দেওয়া হয় – অথচ মুর্খ রসরাজ নির্দোষ, তারপরও তার নিঃশত্য মুক্তি মেলে না। গোবিন্দগঞ্জে সাওতালদের  ঘরবাড়িতে আগুন- সে আবার পুলিশ জড়িত। সংখ্যালঘুদের অত্যচারের বিচার চাইতে যাওয়ার জন্য পিয়া্লদের জেলে যেতে হয় – মুহুতে তিনটি কেস হয়ে যায় তাদের বিরুদ্ধে- তাদের জামিন মিললেও মুক্তি মিলে না। অর্পিত সম্পত্তির মারপ্যাচে হিন্দুরা নিঃস্ব । অথচ স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের অবদান অনেক অনেক বেশী। দেশে একটিও হিন্দু রাজাকার পাওয়া যাবে না অথচ তারা আজ নিজের বাপ দাদা মায়ের ভিটেতেই পরবাসি। এক্ষেএে কল্যাণকামী রাস্ট্রের দায়িত্ব ছিল উন্নয়নের সাংবিধানিক নির্নয় করা এবং সর্বজনীন করা যাতে সবাই এর সুফল পেতে পারে। কিন্তু বিষয়টা যদি উল্টো হয় তাহলে কি ভাববো? উন্নয়ন প্রকৃয়ার যে দাবীই করা হোক না কেন প্রকৃত উন্নয়ন হয়েছি কি?

১) অর্থনৈতিক স্বাধীনতা

২) রাজনিতিক ও সামাজিক সুবিধা

৩) স্বচ্ছতার এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা

এই সমস্ত স্বাধীনতার কোনটি দৃশ্যমান সংখ্যালঘুদের ?

বাংলাদেশে এমন কোন দিন নেই যে হিন্দুরা অত্যাচারিত ছাড়া। জমি দখল, ধষণ এবং বিভিন্ন হয়রানী নিত্য ঘটনা। যেমন জমির দখল নিতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাড়ি-ঘরে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে শুক্রবার (১৭ মার্চ)।স্থানীয়দের অভিযোগ, ১০ দিন আগে সুন্দরপুর যুক্তিপাড়ায় ৭৮ ও ৭৯ নম্বর দাগে ৭৬ শতক জমিতে মডল সরেনসহ কয়েকজন সাতটি ঘর তৈরি করে। এই জমিগুলো নিজেদের দাবি করে উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের মোজাম্মেল হক। তাদেরকে জমি ছেড়ে চলে যেতে বলে। কিন্তু তাদের দাবি এটি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। এরপর মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে শুক্রবার দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর ও চলে যাওয়ার সময় আগুন দেয়। আগুন দেখে স্থানীরা তা নেভাতে এগিয়ে আসে। তাদের মারধর করে দুবর্ত্তরা। এ ঘটনায় মডল সনেরসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এতে লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।মডল সরেন বলেন, ‘বংস পরস্পরায় এই জমি আমরা ভোগ করছি। পৈত্রিক সূত্রে এই জমি চাষাবাদ করে আসছি। কিন্তু ছেলেদের বাড়ি-ঘর তৈরির প্রয়োজন হওয়ায় ১০ দিন আগে বাড়ি-ঘর তুলি। এরপর হঠাৎ করে মোজাম্মেল হকসহ কয়েকজন তাদের জমি বলে দাবি করেন।’
বাড়ি-ঘরে আগুন, ভাঙচুর, হামলা ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে শনিবার (১৮ মার্চ) গোদাগাড়ী মডেল থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে মডল সরেন। কাশিমপুর গ্রামের মোজাম্মেল হক, তার ছেলে দুরুল হোদা, ঘিয়াপুর পুকুর এলাকার নাসির উদ্দীন ও কাশেমের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেছেন।এ ব্যাপারে গোদাগাড়ী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিপজুর আলম মুন্সি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।হবে যে কবে শেষ হবে, সেই অপেক্ষায় ……।

চলবে…………।।

লেখকঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক এবং চেয়ারম্যান, রিসার্চ এন্ড আম্পাওয়ারমেন্ট অর্গানাইজেশন, বাংলাদেশ ।

Prof Chandan Sarkar

Disclaimer: The facts and opinions expressed within this article are the personal opinions of the author. www.HinduAbhiyan.com does not assume any responsibility or liability for the accuracy, completeness, suitability, or validity of any information in this article. Subjected to Delhi Jurisdiction only.

Share

Compare