রহস্যময়ী
२०१७-०५-२३
সাইকেলের মধ্যের অংশের যে ফাঁকা জায়গা তার মধ্য দিয়ে পা সহ দেহটাকে ঢুকিয়ে সাইকেল চালানো শিখিয়ে দিয়েছিল আমার এক দাদা। সেখানোর পর বলল তুই ভালো করে প্র্যাকটিস করতে থাক তাহলেই শিখে যাবি। নতুন সাইকেল চালানো শিখচ্ছি গ্রামের লোকহীন রাস্তা সকাল দুপুর বিকাল বিরামহীন, শুধু প্র্যাকটিস আর প্র্যাকটিস।
আমাদের গ্রামের বাড়ি, ঢাকার-মানিকগঞ্জের মহাদেবপুর। বাবার চাকরির সুবাধে থাকি মানিকগঞ্জ শহরে।গ্রামে বেড়াতে এলে সবাইভাবে আমরা শহুরের লোক। মোটো পথ–রাস্তায় যাতায়াত করা লোকের সংখ্যা নেই সকাল দুপুর বিকাল রুটিন করে সাইকেল চালানো শিখচ্ছি আর চালাচ্ছি। মনে হচ্ছিল যেন একদিনের মধ্যেই চালানো শেখা হওয়া যাবে। পরের দিন সকাল দুপুর চালিয়েছি, বিকেলে নিজেকে পাকা ড্রাইভার মনে হচ্ছে, মাঝে মাঝে হাত ছেড়ে চালানোর প্র্যাকটিসটাও হচ্ছে-কেউকাটা আর কি।
বিকেল বেলায়, হঠাৎ দূর থেকে দেখতে পেলাম কয়েকজন ছোট ছোট মেয়ের একটা দল এগিয়ে আসচ্ছে, তাদের মধ্যে একজন বড় মাসীর টাইপের সবাইকে গাইড করে নিয়ে আসচ্ছেন।
মেয়েদের দেখে দূর থেকেই আমি মাএারিক্ত সতর্ক। ভাবচ্ছি রাস্তার এক পাশ দিয়ে যাব যাতে কোন সমস্যা না হয়। দলটি কাছে আসতেই অতিরিক্ত মাত্রায় সতর্কতার জন্য হ্যান্ডেলের হাত কেঁপে উঠলো, আর মেয়েদের দলের মধ্যে ছোট্ট সুন্দরী আমার সাইকেলের হ্যান্ডেল এদিক ওদিক ঘোরার জন্য দিল এক দৌড় রাস্তার সে মাথা থেকে এ মাথায়। ব্যস, আমি আর যাই কোথায় যা হবার তাই। নাদুস নুদুস বালিকাটির সাথে লাগলো সাইকেলের এক ধাক্কা–সাইকেল তার আপন মনে গড়িয়ে পড়তে লাগলো রাস্তার নিচে আর আমি মেয়েটির সাথে গিয়ে পড়লাম রাস্তার পাশে খাদের মধ্যে।
বড় মেয়েটি হায় হায় করতে করতে নাদুসকে টেনে তুললেন। আমি কাঁদা মেখে ভুত। কিছুটা সামলে নিয়েছি। হঠাৎ মাসী গোছের মেয়েটি ভয়ংকর এক মুর্তি ধারণ করে তার বিশাল দেহের বিশাল হাত দিয়ে আমার ছোট্ট হাতটা ধরেই দিলেন এক হুকার। কে তুই? ফাজিল কোথাকার! সাইকেল চালাতে পারিস না? মানুষের উপর-কোলের উপর তুলে দিস। একটা চড়ে তোর দুই পাটির বত্রিশ দাঁত তুলে ফেলব!
ঐ তোর বাড়ি কোথায়? আমি দেখালাম পাশের বড় বাড়িটি। সে এবার উগ্রমূর্তি ধারণ করে এক চড় নিয়ে আমার গালের কাছে নিয়ে,মারবো এক চড় বেয়াদব, ফাজলামির আর জায়গা পাশনা, আমি বুঝি চিনিনা এই পাড়ায় কার বাড়ি কোথায়? হঠাৎ নাদুস নুদুস মেয়েটি হু হু করে কেদেঁ ফেললো-হু আমার জামায় কাঁদায় মেখে গেছে, মাসী? তাতে এবার মাসী আমাকে ছেড়ে নাদুস নুদুস কে সামলাতে লাগলেন।(মানে বোঝাতে চাইলেন আমার বাড়ি অন্য জায়গায় আমি তাকে মিথ্যা বলেছি)মুখে অনেক কিছু বলতে বলতে রাস্তায় উঠে চলে গেলেন।
তারা চলে যেতেই আমি চেষ্ঠা করছিলাম আমার সাইকেলটাকে টেনে তুলতে কিন্তু টানা টানি সার। কিছুক্ষন বাদে আমাকে না দেখে আমার দাদা দৌড়ে এসে আমাকে এবং আমার সাইকেলটিকে টেনে তুললেন ।
পরের দিন ভয়ে আমি আর সাইকেলের দিকে হাত বাড়াইনি, কোথাও বেরও হইনি বাড়িতেই আছি, বিকেল বেলা দেখছি সেই গতকালের দলটি, যাদের সাথে আমার সাইকেলের ধাক্কায় আমি খাদে পরে গিয়েছিলাম এবং সাথে সেই বড় মাসিটিও আছেন। কিন্তু তারা আমাদের বাড়ির দিকেই আসচ্ছেন কেন? আমি ভাবলাম, বাড়িতে নালিশ দিলেতো গাল আর পিঠ কোনটাই বাদ যাবে না। কালতো চড় গালে কাছে নিয়েও দেয়নি। একদম চড় খেতে খেতে, হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম আজ বাড়িতে নালিশ দিলেতো পিঠে আমার ঘুঘু চড়বে।
বাড়িতে এসেই দেখলেন ভুত দেখার মতো দেখচ্ছেন আমাকে। দু এক কথায় বুঝলেন যে, না আমাদের বাড়ি এটাই এবং আমি এই বাড়ির বড় ছেলের (গার্ডিয়ানের) বড় ছেলে। বন্ধে গ্রামের বাড়িতে এসেছি। কথার মাঝখানে এটাও বুঝলাম যে, এই ছোট মেয়েদের দলটির বাড়ি ঢাকায়। ছোট্ট মেয়েটির যার সাথে আমি খাদে গিয়েছিলাম তার বাড়ি ঢাকার মতিঝিলে,বড় মোটা মাসীদের বাড়িতে এরা বেড়াতে এসেছেন।
গতকালের মেঘ মনে হলো কিছুটা কমেছে সবার মাঝখান থেকেই। এটা ওটা দেখছে,খাচ্ছে সবাই। কিছুক্ষন বাদে নাদুস নুদুসের চোখে প্রলো তার মাথার উপরের পেয়েরা গাছ। বায়না পেয়েরা গাছের পেয়ারা খাবে। আমাদের গাছে অনেক পেয়ারা কিন্তু গাছতো আর কাজি পেয়ারা নয় যে হাত দিয়ে পারা যায়। গ্রামের পেয়ারা গাছ বড় এবং ভালো পেয়ারা গুলো উঁচুতে।
দাদা বললেন সে পেরে দিবে। হঠাৎ আমার মধ্যে কি হলো জানি না আমি এগিয়ে বললাম না ‘আমি পেরে দিচ্ছি’। আমি গাছে উঠতে পারি। কাজিন দাদা বললেন ঠিক আছে তুই পার কিন্তু দেখিস, আবার বেশি উপরে উঠতে যেয়ে পরে যেও না বাপু আমার, খাদে কিন্তু কাল পরেছিলা। বুক ফুলিয়ে বললাম না না আমি পারব।ঠিক আছে বলে কাজিনদা কাঁচি নিয়ে মাঠের দিকে চলে গেল।
মনে মনে ভাবছি যাক গতকালের দায়টা মনে হয় শোধ করা যাবে। ভালো ভালো পেয়েরাগুলো সব উপরের মগডালে এবং আগার ডালগুলো অনেক সরু। আমি পেয়ারা পারছি আর নিচে ফেলছি। মেয়েগুলো কুড়িয়ে নিছে আর বলছে ঐ যে ওটা । ছোট্ট মেয়েটা ঐ ঐটা দেখাতে দেখাতে এক দম গাছের নিচে। আর আমি ঐটা পারার জন্য আরও উচুতে, নিজে আমি তখন টারজান সিরিয়াল দেখা টারজান। উঁচুতে উঠে যেই না ছোট ডালে পা দিয়েছি। আর যাই কোথায়- ডাল ভেজ্ঞে পড়তো পর একদম মালীর ঘারে।
মাসীতো তারা তারি এসে ছোট্ট মিষ্টি মেয়েটিকে উদ্ধার করলেন এবং আমার দিকে যেভাবে তাকালেন তাতে মনে হলো সে আমাকে খেয়ে ফেলবে এখন। বাড়ির কাকীমারা ভাইয়েরা দৌড়ে এলেন বলে রক্ষা। মাসী রাগতে ছিল আর বলছিলেন পাজি বেয়াদব, কালকেও এই পাজিটা সাইকেল তুলে দিয়েছিল আমার সোনা মনির উপর আজ আবার উপর থেকে পরেছে। আমার মতো পাজি ছেলে দুনিয়ায় আর দুইটা নেই। তারা সবাই রাগতে রাগতে আমাদের বাড়ি প্রস্থান করলেন।
আমার আর জানার সুযোগ হয়নি মেয়েটির কি অবস্থা, কারন তার পরের দিন বাবা আমাদের নিয়ে শহরে চলে আসেন।
কলকাতা থেকে সদ্য পাশ করে ফিরেছি দেশে। এসেই চাকরি খুঁজচ্ছি বিভিন্ন জায়গায়। CV ড্রপ করলাম মিনিলিয়াম নামের এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে, ধানমন্ডিতে। বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই, ঐ তোকে মিলিনিয়াম স্কুল থেকে ফোন করেছিল কালকে ইন্টারভিউ দিতে যেতে বলেছে।
স্কুলের প্রিন্সিপালের অফিসে বসে আছি, অফিস থেকে দেখছি একটা বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে যাচ্ছে বারান্দা দিয়ে আর তাকে ধরার জন্য ছুটে আসছে ‘এক অপরুপা সুন্দরী’ মাঠে বাচ্চাটিকে ধরতে গলার ওড়নাটি পড়ে গেল। সে তার ওড়নাটি ঠিক করার সন্ধিক্ষণে সুন্দরীর সাথে প্রথম চোখে চোখে দেখা।সকালের নরম রৌদ, ঘাসের উপর এক সুন্দরি, মায়াবী চোখ, দেহ পল্লবী যেন শিল্পীর পটে আঁকা ছবি।আমি তাকিয়ে আছি তার দিকে এক তীব্র আকর্ষণে। আমার চাতকীর চাহনির মাঝে সে তার ওড়নাটি ঠিক করছেন। আস্তে আস্তে হেঁটে এগিয়ে আসছিলেন আমার দিকে।আমার মনে হচ্ছিল কোন এক মায়াবী হরিনী।আমি শুধু তাঁকেই দেখছি – এদিকে প্রিন্সিপালের অফিসের মহিলাটি আমাকে ডাকচ্ছেন, এই আপনাকে স্যারের রুমে ডাকছে। আমার কানে তার কথা পৌঁছয়নি, আমি দেখছি তখন এক অপরূপাকে আর ভাবছি ইস, আর সাথে যদি একটু কথা বলা ছোয়া যেত? আরও কত কি। মহিলাটি আবার আমার সামনে এই যে আপনি কি করছেন? আপনাকে স্যারে ডাকছেন? আমি সম্বিত ফিরে পেলাম। বললাম ও আচ্ছা, মাহিলাটি দেখি মুচকি একটা হাসি দিলেন, বোঝাতে চাইলেন দিতে এসেছেন চাকরির ইন্টারভিউ আর তাকিয়ে আছেন মেয়ের দিকে।
চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে ফিরে যাচ্ছিলাম রিস্ক্রায় বাসায়, চাকরি হবে কি হবে না এগুলো নিয়ে মাথায় কিছু নেই। আমার মাথার মধ্যে গিজ গিজ করছিল অন্য চিন্তা, ভাবছি সেই মিষ্টি মেয়েটির কথা এবং তার ওড়না ঠিক করার সময়কার হাসির কথা। মনে মনে ভাবছিলাম তাকে যদি দেখা যেত-পাওয়া যেত।বাড়িতে ফিরলাম দেরী করে, সবাই বলল,তোর ইন্টারভিউ কেমন হলো? কিসের কি, আমার মাথায় এক চিন্তা। অনুভবের বিষয়, এমনি এক শক্তি যা রক্তের মধ্যে মিশে আছে এক তীব্রতায়। অনুভব করি সমস্ত স্বত্বা দিয়ে, যেটাকে বলি আত্মার বন্ধন।
এটা কে কি প্রেম বলে? কি জানি? তার মিষ্টি হাসিটি আমাকে এখনও মোহিত করে,দূর্বার বেগে আমাকে কাছে টানে, আগের থেকে বেশী, হাসিটি এখন আরও নতুন আরও উজ্জল সুন্দর। এটাকে পাবার জন্যই কি পতঙ্গরা মৃত্যু নিশ্চিত যেনও ঝাপিয়ে পড়ে আগুনের মধ্যে? আমিও কি তাদের দলের একজন? নাকি তাকে পেতে চাই জীবনের জন্য,বাঁচায় জন্য, জীবন পূর্ণ করার জন্য।কারও সৃ্ত্মি নিয়ে বাঁচার পক্ষপাতি আমি নই।কাউকে সাথে করে জীবন পূর্নতায় আমি বিশ্বাসী।আমি প্রিয় মানুষকে নিয়ে বাঁচায় বিশ্বাসড়- আদিমতায় বিশ্বাসী, আত্মার আত্মিয়কে সাথে নিয়ে বাঁচার মানেই হলো আসল, আর সেই জীবনের মানেই আলাদ্ যেটাকে আমি বলি জীবনের আসল উদ্দেশ্য।সেটা কারও কাছে আলাদা মনে হলেও আমি এটাকেই বিশ্বাস করি, আমি তাকে চাই এবং আমার পেতেই হবে।কেউ পূরানো দিনের সৃত্মিকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চায়।আমি তাদের দলে নই। আমি চাই, হ্যাঁ আমি চাই, তার সব কিছু নিয়ে বাঁচার।কারন,এটা আমার পূর্নভাবে বেঁচে থাকার ঔষুধ, যা জীবনের প্রয়োজন, তাকে ছাড়া আমার চলবে না। এই চলবে না ভাবতে ভাবতে আমার দিন কাটতে থাকলো। আর এই ঘোর এবং এক অজানা আর্কষণের মধ্য দিয়েই জয়েন্ট করলাম মিলিনিয়াম স্কুলে যেখানে অপরূপাকে দেখি প্রতিদিন। একদিন বিকালের পড়ন্ত রৌদে, লাইব্রেরীতে সে আমাকে ছুয়ে দিয়েছিল তার ঠোটের মৃদুস্পর্শ যা উষ্ণতায় হ্রদয় উদ্দেলিত-উত্তাল। যেটার তীব্র আর্কষণ আমাকে তাড়িত করে। এতভাবে করে কেন?আমি জানি না, তবে আমি এটা নিশ্চিত যে, সেই আর্কষণ কোনদিন শেষ হবার নয়।
চলবে…………………………।
লেখক-চন্দন সরকারঃ প্রাবন্ধিক