এই রক্ত গঁঙ্গার শেষ কোথায় …………
শেফালী রানীকে প্রনাম করে জিজ্ঞাসা করলাম, কেমন আছেন?তিনি বললেন, এইতো সেদিনের কথা, মনে হয় সেদিন, এক কাপড়ে এসেছিলাম তার সংসারে, ভেজা কাপড় পরেই থেকেছি, আবার শুকিয়ে গেছে গায়ে। এভাবে ৫০ বছর পার করেছি ।সংসার জীবনে কোনোদিন দু – এক কথার কাটাকাটি হয়নি তা নয়, তবে অসুখী ছিলাম না কখনও। হাতের শাখাটা ভেঙে গিয়েছিল বেশ কিছুদিন ধরে। তিনি বললেন, এখন আর এগুলোর দরকার কি?কেন বলতেন, অভাবের সংসারে আমি সব কিছু না বুঝলেও উপলদ্ধি করি।
শ্যামদাস আমার সবামী,তার কি অপরাধ ছিল? সে তো মানুষের বাড়ি ফুল দিয়ে, পূঁজা করে খেত। হায়, ভগবান ওরা আমার সিঁদুর কেড়ে নিল, শাখা কেড়ে নিল, সাদা কাপড় পরিয়ে দিল। ওদের কি বিচার হবে না, ভগবান? সকালে সে সাইকেলে বেরিয়েছিল, আহা! আর ফিরল না, কিছুই তো বলে গেল না, যদি জানতাম এভাবে খুন করবে, তাকে কি যেতে দিতাম?” এই শোকগাথা ঝিনাইদহের নলডাঙ্গার পুরোহিত নিহত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীর স্ত্রী শেফালী গাঙ্গুলীর। (কয়েক মাস আগে ঘাতকের চাপাতির কোপে নিহত)
সকাল সকাল উঠে রওনা দিচ্ছো কিছু একটা মুখে দিয়ে যাও। গরীবের ঘরে সব কিছুই বার বাড়ন্ত তারপরও মুড়ি বা বাসি ভাত দেওয়ার রিতিটা আলকাল উঠে গেলেও তাদের মধ্যে কোন কমতি ছিল না। তবে হ্যাঁ- সেদিনের শেফালী রানীর অনুরোধটি শামদাস রাখতে পারেনি কারন পাছে তার পুঁজার দেরী হয়ে যায়। তবে বেড়িয়ে যাবার আগে বলে গিয়েছিল, আমি পুঁজাটা করেই তাড়াতাড়ি বাড়ি এসে ভাত খাব।
না শেফালী রানী রান্না করার স্ময় পায়নি-আবার শ্যামদাসও পায়নি- কারন রাস্তায় উত পেতে বসে থাকা ন্র ঘাতকদের চাপাতি সব কিছুই ধুলিসাৎ করে দিয়েছে।
আমি কখনো ভাবিনি–তাকে এভাবে মারা যেতে হবে- সাদা শাড়িটি আমাকে এভাবে জড়াতে হবে। অভাবের সংসারে তাকে অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতে হয়েছে।তারপ্রও জীবনে ছল চাতুরির আশ্রয় নেয়নি। যে মানুষটি প্রত্যেকের সাথে এত সুন্দ্র ব্ব্যহার করতেন আর তাকে কিনা বিনা অপরাধে অমানুষরা কুপিয়ে হত্যা করল? তুমি বলতে পারো, তার কি অপরাধ ছিল? তার কি অপরাধ? আমি বোকার মত কিছুক্ষন বসে থাকলাম, তারপর মাথা নিচু করে সেখান থেকে সরে এলাম – কারন তার প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই।